স্টেশনটা ছোট্ট কিন্তু কেমন যেন ছবির মতো গোছালো, মন ভরে কিন্তু আনন্দ দেয়না। তাই প্রায় প্রতিবারই বিষন্ন করা..মন খারাপ করে দেয়া এক ধরনের অনুভূতি নিয়ে উঠে দাড়াই আমি। গত চারটি বত্সর প্রতিটিদিন এই স্টেশনএ খুব ভোরের ট্রেনে শহরে যাই আমি, ফিরি মধ্যরাতে। প্রতিবারই একই অনুভূতি হয় আমার।বিষন্নতা আর মন খারাপ ভাবটা কাজের ফাকে ফাকে অসংখ্যবার উকি-ঝুকি দেয়, পাত্তা দেই না।
তবে আজকের দিনটা আলাদা, আজ মন স্থির করে বাসা থেকে বের হয়েছি, কোনো কিছুতেই মন খারাপ করবোনা। আমার পাশের রুমের সাদা চামড়ার সাহেবরা বরাবরের মতোই আমার দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্লের হাসি হাসবে, বলবে "আগলি নিগার", যেই ম্যাক্সিকান মেয়েটাকে বড্ড ভালোলাগে-মাঝে মাঝে যার সাথে দুদন্ড বসে কথা বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু সময় হয়না, সেই সময়টাকেও আজ গালমন্দ করতে ইচ্ছে করবেনা। মাঝে মাঝে যে রেস্টুরেন্টটাতে খেতে যাই, সস্তাদামি কোনো খাবারের অর্ডার দিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকি..ওয়েটারগুলো যে দৃষ্টিতে তাকায়.. তাকে বলে "বিরক্তি", আজ তাদেরকেও ক্ষমা করতে খুব ইচ্ছে করবে। ইচ্ছে করবে এখানের আর দশটা সাদা চামড়াদের মত করে পাশ দিয়ে যাওয়া পরিচিত-অপরিচিতদের একগাল হাসি দিয়ে "হ্যালো" বলতে..ইচ্ছে করবে খোলা জীপে সাথে দশটা বন্ধুকে নিয়ে হল্লা করতে..ইচ্ছে করবে কত কিছুইনা করতে...
কিন্তু পারলাম কই? এই প্রবাসে কজনেইবা পারে?
তাই আজ সব দুঃখ গুলোকে পাশ কাটিয়ে ফিরে চললাম আমি. ফিরে চললাম নিজের দেশে..পরাজিত হয়ে প্রবাসে এসেছিলাম, বিজয়ীর বেশে ফেরে চললাম আজ. ওদের দেয়া দুঃখ কষ্টগুলো ওদের দেশেই তাই ফেলে যেতে চেষ্টা করলাম এতক্ষণ। জঞ্জাল রাখার কোনো মানেই হয়না...
ট্রেনেটা চলে এসেছে, ঘড়ির কাটা মেনে ঠিক ৬ টায় স্টেশন ঢুকলো ওটা. সবাই হুড়মুর করে ট্রেনটার পেটে সেধতে চাইছে। আজ আমার কোনো তাড়াই নেই, আজ আমি দেশে ফিরব.....
আমার দেশের মানুষগুলোর এদের মত এত তাড়া নেই, আমাদের ট্রেনগুলোও অবধারিত জানি দেরীতে আসবে..স্টেশন গুলো হবে জরাজীর্ণ, মানুষগুলো হবে হতদরিদ্র তবুও যখন মহীরুহের মত পাশে দাড়িয়ে থাকা শিমুল গাছগুলোতে লাল রক্তের মত ফুলগুলো ফুটে উঠবে, ছোট্ট আর ভাঙ্গা স্টেশনটাকে আমাদের তখন মনে হবে এক টুকরো স্বর্গ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রজ্ঞা মৌসুমী
ওয়াশিংটন বেড়াতে গিয়ে এবার 'মেট্রো-জার্নি' অভিজ্ঞতা হলো। পুরো ব্যাপারটা রূপকথাই কিন্তু বড্ড একঘেয়ে, যান্ত্রিক। দেশের ট্রেন/স্টেশনে--- ফেরীওয়ালা, হৈচৈ, শব্দ...একটা জীবন্ত বর্তমান। ছোট পরিসরে একটা গভীর ভাবকে তুলে ধরেছেন। একটা ট্রেন থেকে আরেক ট্রেনে যেভাবে নিয়ে গেলেন-এপ্রোচটা ভালো লেগেছে। 'তুলনা' করে একটা গল্প দাঁড় করানো- সেই চেষ্টা কখনো করিনি। আপনার গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হলাম এবং ভাঙ্গা স্টেশনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে...
নাফিসা রহমান
প্রবাস জীবনে দেশের প্রতি টান দ্বিগুণ অনুভূত হয়... সবাই কি পারে সেই টানে ফিরে আসতে? ... তবে গল্পের লেখক পেরেছে তাই মনটা ভালো লাগায় ভরে গেলো... শুভকামনা রইল...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“আগষ্ট ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ আগষ্ট, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।